চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর ইতিহাস এবং দর্শনীয় স্থান
আপনি কি চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর ইতিহাস এবং দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে চাইছেন? তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।এই আর্টিকেলের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সম্পর্কে তথ্যগুলো আপনাদেরকে জানাবো। এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পরলে আরও জানতে পারবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার থানা কয়টি।
ভূমিকা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামটি সাম্প্রতিককালের। প্রাচিনকালে এই এলাকা ‘নবাবগঞ্জ’ নামে পরিচিত ছিল।প্রাক-ব্রিটিশ আমলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলটি ছিল মুর্শিদাবাদের নবাবদের বিহারভূমি এবং এর অবস্থান ছিল বর্তমান সদর উপজেলার দাউদপুর মৌজায়। নবাবরা তাঁদের পাত্র-মিত্র ও পারিষদসহ এখানে শিকার করতে আসতেন তাই এ স্থানের নাম হয় নবাবগঞ্জ। নবাব আলীবর্দী খাঁর আমলে (১৭৪০-৫৬ খ্রি) নবাবগঞ্জ নামকরণ হয় বলে অধিকাংশ গবেষক মতামত দিয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর ইতিহাস
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত এক্টি। এই জেলাটিকে কখনো নবাবগঞ্জ এবং চাঁপাই নামেও ডাকা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঐতিহাসিক নিদর্শন ও প্রতণসম্পদে ভরা একটি জেলা। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ের রাজধানী হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা পরিচিত।
এই উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও দর্শনীয় নিদর্শন পাওয়া যায়। হিন্দু শাসন আমলে বিশেষ করে সেন বংশের শেষ রাজাদের খননকৃত দিঘী ও সুলতানী আমলে মুসলিম সুলতানদের নির্মিত মসজিদই এ জেলার প্রধান ঐতিহাসিক স্থাপনা। ১৯৮৪ সালে একটি একক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে চাঁপাই নাবাবগঞ্জ জেলা।
অবস্থান ও আয়তন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মোট আয়তন ১,৭৪৪ বর্গ কিলোমিটার। বাংলাদেশের মানচিত্রে সর্ব পশ্চিমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অবস্থান । এর উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে রাজশাহী জেলা ও নওগাঁ জেলা অবস্থিত। এটির ভৌগোলিক অবস্থান ২৪°২২′ হতে ২৪°৫৭′ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৭°৫৫′ হতে ৮৮°২৩′ পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যে অবস্থিত।
চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার জনসংখ্যা ১৬৪৭৫২১ জন। এই জেলার মোট জনসংখ্যার ৯৫.৩৬% ইসলাম ধর্মালম্বী, ৪.০৪% হিন্দু ধর্মালম্বী, ০.৩৫ % খ্রিস্টান ধর্মালম্বী এবং ০.২৫% জনগণ অন্যান্য ধর্মের অনুসারী বসবাস করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার থানা কয়টি ও কি কি?
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার থানা : ৫টি
- শিবগঞ্জ,
- নাচোল,
- ভোলাহাট,
- গোমস্তাপুর ও
- নবাবগঞ্জ সদর
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থানা উপজেলায় উন্নীত হয়। ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ নবাবগঞ্জ মহকুমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা ঘোষণা করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ইউনিয়ন সমূহ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন রয়েছে যথাঃ-
- আলাতুলী
- বারঘরিয়া
- মহারাজপুর
- রানীহাটি
- বালিয়াডাঙ্গা
- গোবরাতলা
- ঝিলিম
- চরঅনুপনগর
- দেবীনগর
- শাহজাহানপুর
- ইসলামপুর
- চরবাগডাঙ্গা
- নারায়নপুর
- সুন্দরপুর
- বিনোদপুর
- চককির্তী
- দাইপুকুরিয়া
- ধাইনগর
- দুর্লভপুর
- ঘোড়াপাখিয়া
- মোবারকপুর
- মনাকষা
- নয়ালাভাঙ্গা
- পাঁকা
- ছত্রাজিতপুর
- শাহাবাজপুর
- শ্যামপুর
- কানসাট
- উজিরপুর
- রাধানগর
- রহনপুর
- বোয়ালিয়া
- বাঙ্গাবাড়ী
- পার্বতীপুর
- চৌডালা
- গোমস্তাপুর
- আলীনগর
- ফতেপুর
- কসবা
- নেজামপুর
- নাচোল
- ভোলাহাট
- জামবাড়িয়া
- গোহালবাড়ী
- দলদলী
বাংলাদেশের আমের রাজধানীর নাম কি?
বাংলাদেশের ভিতরে সব থেকে বেশি আম উৎপাদিত হয় চাঁপাই নবাবগাঞ্জ জেলায়। তাই চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলাকে আমের রাজধানী বলা হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালীন সময়ের এই ফলটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অর্থনীতির প্রধান উৎস। এই জেলার অধিকাংশ জমিতে আম চাষ করা হয়ে থাকে। শিবগঞ্জ, ভোলাহাট,নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায় সব থেকে বেশি আম উৎপাদিত হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত আমের মধ্যে কিছু আম এর নিচে দেওয়া হলোঃ
- ফজলি
- সুরমা ফজলি
- বোম্বাই ফজলি
- গোপালভোগ
- লখনা
- আশ্বিনা
- ল্যাংড়া
- রানীপছন্দ
- লক্ষণভোগ
- ক্ষিরসাপাত
- হিমসাগর
- দুধস্বর
- তোতাপুরী
- গৌড়মতি
- বোম্বাই
- হাঁড়িভাঙা
- বারি আম-২
- বারি-৩
- মোহনভোগ
- ক্ষিরমণ
- সুন্দরী
- সুবর্ণরেখা
- কালাপাহাড়
- অরুনা
- চৌষা
- রাজভোগ
- কোহিতুর
- বউ-ভুলানি
- জমরুদ
- বিলু পছন্দ
- কাগরি ইত্যাদি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর দর্শনীয় স্থান
- ছোট সোনা মসজিদ
- ছোট সোনা মসজিদ পার্ক
- তোহাখানা
- শাহ নেয়ামতুল্লাহ এর মাজার
- চামচিকা মসজিদ
- দারাসবাড়ি মসজিদ
- ধানিয়াচক মসজিদ
- স্বপ্নপল্লী
- নাচোল রাজবাড়ী
- বাবুডাইং
- রহনপুর নওদা বুরুজ
- গোয়াইন বাধ ৭ টি*
- নীলকুঠি
- মহানন্দা নদী
- শুড়লার তেঁতুল গাছ
- স্বপ্ন পল্লী পার্ক
- টাংঘন পিকনিক পার্ক
- কানসাটের জমিদার বাড়ি ইত্যাদি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিক্ষাব্যবস্থাঃ
- ৩৭০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়;
- ২৮২টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়;
- ৪টি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়;
- ২০৪টি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়;
- ৪টি সরকারি কলেজ;
- ৪৮টি বেসরকারি কলেজ;
- ১২৮টি মাদ্রাসা;
- ১টি সরকারী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র;
- ১টি বেসরকারী কারীগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
- ১টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং
- ১টি যুব উন্নয়ন কেন্দ্র ।
- ২টি PTI আছে।
- আদিনা ফজলুল হক সরকারি কলেজ
- বিনোদপুর কলেজ
- রহনপুর এ. বি. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
- রহনপুর ইউসুফ আলী সরকারি কলেজ
- শিবগঞ্জ সরকারী মডেল হাইস্কুল,
- চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট,
- নাচোল এশিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ,
- হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়,
- নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ,
- রাজারামপুর হামিদুল্লহ উচ্চ বিদ্যালয়,
- রাজারামপু হাসিনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,
- সরকারি টেকনিকাল স্কুল এন্ড কলেজ,
- নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ,
- নবাবগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ,
- শাহনেয়ামতউল্লাহ কলেজ
- বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজ
- এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
গম্ভীরা
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
- গোলাম আরিফ টিপু - একুশে পদক পেয়েছেন।
- ইলা মিত্র - উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তি, ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ছিলেন।
- প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদ - বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য।
- প্রফেসর মো.রফিকুন নবী (র’নবী) - আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ ফাইন আর্টস এর পরিচালক ছিলেন।
- আলোকচিত্রাচার্য মঞ্জুর আলম বেগ - বাংলাদেশের আলোকচিত্র আন্দোলনের পথিকৃৎ, আধুনিক ফটোগ্রাফীর জনক, একুশে পদক প্রাপ্ত আলোকচিত্রাচার্য। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন
- বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমান শেলি - ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা/অন্তবর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকার প্রধান, বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি, মহান ভাষা আন্দোলের বীর সৈনিক, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, গবেষক ও লেখক।
- প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মিজান উদ্দিন - শিক্ষাবিদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য(২০১৩-২০১৭)।
- মমতাজউদদীন আহমদ - নাট্যকার, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ।
- মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর -(৭ মার্চ ১৯৪৯ - ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url