কীভাবে কম খরচে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করবেন

আমাদের প্রায় সবারই ভ্রমন করা অন্যতম একটা শখ। কিন্তু কীভাবে কম খরচে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করবেন বুঝতে পারছেন না। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটির মধ্যে আমরা চেষ্টা করেছি উপরক্ত বিষয় তুলে ধরার। তাই বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পযন্ত পড়ুন।
কীভাবে কম খরচে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করবেন
এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা আরও চেষ্টা করেছি সেন্টমার্টিন সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরা। এছাড়া জানতে পারবেন এর হোটেল ব্যবস্থা ও দর্শনীয় স্থান গুলো তুলে ধরার হয়েছে। আসা করি সেগুলো আপনার উপকারে আসবে।

ভূমিকা 

সেন্ট দ্বীপ. মার্টিন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের আরেক নাম "নারকেল  জিঞ্জিরা"। সাগরের মাঝখানে থাকায় নাবিক বা জেলেরা পানির তৃষ্ণা মেটাতে সেখানে অনেক নারকেল গাছ লাগায়। সম্ভবত এখান থেকেই নারকেল জিঙ্গিরা নামটি পেয়েছে। সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার একটি দ্বীপ। এটি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হচ্ছে সেন্টমার্টিন। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা।  উত্তর সেন্টমার্টিন এবং দক্ষিণ সেন্টমার্টিন নামে দুটি অংশে বিভক্ত। সেন্ট মার্টিনের উত্তরাঞ্চল জনবহুল এবং অনেক পর্যটন কোম্পানির আবাস স্থল। দক্ষিণ সেন্টমার্টিনে কম ভিড় এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেশি। 

সেন্টমার্টিন এর দৈর্ঘ্য ও আয়তন কত

সেন্টমার্টিন দ্বীপের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫.৬৩ কিলোমিটার। এটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার অন্তর্গত সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার। দ্বীপের পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিমে সাগরে রয়েছে অসংখ্য পাথরের স্তূপ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের গড় উচ্চতা ৩.৬ মিটার। প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রবাল প্রাচীর সেন্ট-মার্টিন-এর পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম অংশ জুড়ে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের অপর নামগুলির মধ্যে রয়েছে:
কক্সবাজারের মালদ্বীপ
বাংলাদেশের মালদ্বীপ

সেন্টমার্টিনের প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে

  • সাদা সৈকত: সেন্ট-মার্টিন সৈকত বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর সৈকতগুলির মধ্যে একটি। সাদা বালি এবং নীল সমুদ্র একটি অনন্য উপস্থাপনা প্রদান করে। 
  • প্রবাল প্রাচীর: সেন্ট মার্টিন একটি প্রবাল দ্বীপ এবং সুন্দর সামুদ্রিক জীবন রয়েছে। আপনি স্নরকেলিং বা ডাইভিং করে প্রবাল প্রাচীর পরিদর্শন করতে পারেন।
  • জাউবন: সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণে সুন্দর জাউবন। এই বাগান একটি শান্ত এবং মনোরম পরিবেশ তৈরি করে।

সেন্টমার্টিন কিভাবে যাবেন এবং জাহাজ ভাড়া (জনপ্রতি) কত

কক্সবাজার থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন যেতে পারেন। এখান থেকে, আপনি দুটি উপায়ে যেতে পারেন। এগুলো হলো: সরাসরি কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন। কক্সবাজার থেকে টেকনাফের আরেকটি রুট। এবং সেখান থেকে সেন্টমার্টিন যান। এতে কষ্ট কম এবং কম ব্যয়বহুল হবে।
সবচেয়ে ভালো উপায় হলো টেকনাফ থেকে সরাসরি সেখানে যাওয়া। চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফের বাসে যাবেন। টেকনাফ ঘাটে নেমে জাহাজে চড়ুন। টিকিটের দাম প্রায় ৬৫০-১,৮০০ টাকা।
যারা একটু অ্যাডভেঞ্চার খুঁজছেন তারা ট্রলারে করে টেকনাফ যেতে পারেন। একটি ট্রলারের ভাড়া ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ বাস ভাড়া ৪০০ টাকা

সেন্টমার্টিনে থাকার হোটেলের নাম ও রুম ভাড়া কত

সেন্টমার্টিনে কমদামি সস্তা হোটেল পাবেন আবার বিলাস বহুল বেশি দামি হোটেলও পাবেন। যদিও ওগুলো হোটেল না, রিসোর্ট। নিচে কিছু হোটেল এর নাম ও ভাড়া দেওয়া হলোঃ 
  • ব্লু মেরিনরিসোর্ট (Blue marine Resort): ব্ল-মেরিন রিসোর্টের এসিযুক্ত ২ জন থাকার রুমের ভাড়া ১৫০০০ টাকা এবং এসি ছাড়া ৫০০০ টাকা, তিনজন রেডরুমের প্রতিটির ভাড়া ৩০০০ টাকা, ছয়জনের রুমের ভাড়া ৪০০০ টাকা এবং দশজন থাকার রুমের ভাড়া ৫০০০ টাকা।
  • কোরাল ভিউ রিসোর্ট (Coral View Resort): এ রিসোট এর সি ভিউ রুমের ভাড়া ২৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা।
  • সিটিবি রিসোর্ট (CTB Resort):  এই রিসোর্ট এ এক রাত থাকার ভাড়া ১৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।
  • পান্না রিসোর্ট (Panna Resort) : পান্না রিসোর্ট এর এক রাত যাপন করতে হলে গুনতে হবে ১৫০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা।
  • সমুদ্র কুটির রিসোর্ট (Sumudra Khtir Resort) : এই রিসোর্ট এ ২০০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা খরচ করতে হবে এক রাত থাকার জন্য।
  • ব্লু লেগুন রিসোর্ট (Blue Lagoon Resort) ঃ এই রিসোর্টের প্রতি দিনের জন্য ভাড়া গুনতে হবে ১৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। কিন্তু এখানে এক সাথে এক রুমে ২-৪ জন থাকা যায়। 
  • ড্রিম নাইট রিসোর্ট (Dream Night Resort) : ১৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা খরচে ২-৪ জন এক রাত থাকতে পারবেন। 
  • সায়রী ইকো রিসোর্ট (Sayari Eco Resort): এই রিসোর্টে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১৮টি রুমে ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায় রাত্রিষাপনের সুযোগ রয়েছে।
  • নীল দিগন্তে রিসোর্ট (Neel Digante Resort): এই রিসোর্টে থাকতে হলে  দিতে হবে ১৫০০-৫০০০টাকা।
  • সেন্ট মাটিন রিসোর্ট : রুম প্রতি এখানে ভাড়া ১৫০০-৩৫০০ টাকা। এটা পশ্চিম বিচে অবস্থিত
  • ডায়মন্ড সিরিসোট : ভাড়া ১২০০-২৫০০।
  • হোটেল স্যান্ড শোর : ভাড়া ১২০০-২৫০০।
  • হোটেল সী ফাইন্ড : ভাড়া ২০০০-৪০০০।
  • ফরহাদ রিসোট :  ভাড়া ১২০০-২৫০০।
  • কিংসুক ইকো রিসোর্ট : ভাড়া ১৫০০-৩০০০।
  • লাইট হাউজ রিসোর্ট : ভাড়া ১৫০০-৩০০০।
  • সমুদ্র কানন: ভাড়া ১২০০-২৫০০।

সেন্ট মার্টিনে অন্যান্য খরচের মধ্যে রয়েছে:

  • সমুদ্র সৈকত সাঁতার: প্রবেশ ফি জনপ্রতি ২০ টাকা। 
  • ছবি: প্রতি ছবি ১০০ থেকে ২০০ টাকা। 
  • সাঁতারের সরঞ্জাম ভাড়া: প্রতিদিন প্রায় ২০০ টাকা। সাধারণভাবে, সেন্টমার্টিন ভ্রমণের জন্য প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে খরচ হয়।

সেন্টমার্টিন ভ্রমন খরচ

ভ্রমন খরচ নির্ভর করে আপনার থাকা, খাওয়া, ও অন্যান্য খরচের উপর। নিচে কিছু খরচের তালিকা দেওয়া হল- 
  • যাতায়াত খরচঃ সেন্টমার্টিন যেতে কক্সবাজার থেকে ট্রলারের ভাড়া প্রতি জনের জন্য প্রায় ১০০০ টাকা, জাহাজের টিকিটের দাম প্রায় ৬৫০-১,৮০০ টাকা এবং স্পিডবোটের ভাড়া প্রতি জনের জন্য প্রায় ২৫০০ টাকা।
  • থাকার খরচঃ এখানে বিভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্ট ও রিসোর্ট রয়েছে যেখানে এক রাতের ভাড়া ১০০০ থেকে প্রায় ৫০০০ টাকা। 
  • খাওয়া–দাওয়ার খরচঃ এটি পুরটা আপনার উপর নির্ভর করবে। কারণ আপনি আপনার খাবার তালিকায় কি রাখবেন সেটার উপর ভিত্তি করে। তবে ২০০-৩০০ টাকায় ভালো মানের একটা খাবার পেয়ে যাবেন।

নৌবাহিনীর নির্দেশনা

সেন্টমার্টিনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কিছু সতর্কীকরণ নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে-
  •  সমুদ্রস্নানের আগে জোয়ার-ভাটার সময় জেনে নিন।
  • এক হাঁটু পানির নিচে না নামাই ভালো।
  • পানিতে নেমে উত্তেজনার বসে তীর থেকে দূরে যাবেন না।
  • প্রাপ্তবয়স্কদের অনুপস্থিতিতে ছোট ছোট বাচ্চা পানিতে নামা নিষেধ।
  • সাঁতার না জানলে পানিতে নামবেন না।
  • একা একা কখনই পানিতে নামবেন না।
  • নৌযান চলাচলকালে লাইফ জ্যাকেট পরিধান করুন।

সতর্কতাঃ 

সেন্ট-মার্টিন ভ্রমণের সময় অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখবেন। রোহিঙ্গাদের প্রবেশ ঠেকাতে যেকোনো চেক-ইন-এ জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রবালের উপর হাঁটার সময়ও সাবধান। অথবা তার পা কেটে ফেলা হতে পারে। ভাটার সময় সমুদ্র সৈকতে না যাওয়াই ভালো। যেহেতু আপনি সৈকতে যাচ্ছেন, যাওয়ার আগে স্থানীয় আবহাওয়া সম্পর্কে জেনে নিন।

আমাদের শেষ কথা

সেন্টমার্টিন দ্বীপটি বাংলাদেশের একটি অমূল্য সম্পদ। প্রিয় পাঠক ইতিমধ্যে আমরা আলোচনা করেছি কিভাবে কম খরছে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করবেন।  সেন্টমার্টিন দ্বীপকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এর ফলে দ্বীপের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url