কোন জাতের কবুতর বেশি বাচ্চা দেয়

প্রিয় পাঠক কবুতর পালনের জন্য সহজ পদ্ধতি কী এটা হয়তো আপনি অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। কী কবুতর পালন করেলে সহজ ও লাভ জনক হবে সেটি নিয়ে আমি আজকে আলোচনা করব। আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পরেন তাহলে জানতে পারবেন কীভাবে সহজ পদ্ধতিতে সল্প পুজিতে কবুতর পালন করা যায়।কবুতর পালনএই আর্টিকেলটির নিচে আমরা চেষ্টা করেছি কবুতর পালনের সহজ পদ্ধতি নিয়ে। এছাড়াও কবুতর পালনের লাভজনক দিক নিয়েও  আলোচনা করেছি যেগুলো আপনার অনেক উপকারে আসবে।

ভূমিকা

কবুতর এমন একটি প্রাণী যাকে সবাই পুষতে ভালোবাসে । স্থানভেদে কবুতরকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়,যেমন ( কপোত, পায়রা, পারাবাত ) ইত্যাদি। বহুকাল আগে যখন মানুষের কাছে যখন তাদের প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগ করার কোন ধরণের মাধ্যম ছিল না, তখন তারা কবিতরের মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান করতেন। কবুতরকে শান্তির প্রতীক হিসেবে, বিবেচনা করে বিধায়, এখনো যেকোনো ধরণের অনুষ্ঠানের শুরুতে শান্তির প্রতীক হিসেবে পায়রা কবুতর উড়ানো হয়ে থাকে।কালের পরিবর্তন সাথে সাথে কবুতরকে মানুষ লালন পালন শুরু করে সাধারণ যে সকল কবিতর আমরা ঘরে প্রতিপালন করি, সেই সকল কবুতরের বৈজ্ঞানিক নাম হল (Columba livia domestica)।এবং বন জঙ্গলে যেসব দেখে থাকি তাদের বৈজ্ঞানিক নাম হল (Columba livia)।

কবুতর পালনের সহজ  পদ্ধতি 

আমাদের দেশে বিভিন্নভাবে কবুতর লালন পালন করা হয়ে থাকে। অনেকেই শখের বশে কবুতর পালন করেন। এছাড়া আমাদের দেশে এখন বাণিজ্যিকভাবেও কবুতর পালন করছেন। বিশেষ করে বেকারত্ব দূর করতে কবুতর পালন ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। কবুতর পালন করতে বেশি জায়গারও প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে কম খরচে অল্প সময়ে বাচ্চা পাওয়া যায়, বাজারে দামও বেশি। তাই খুব সহজেই কবুতর পালন করে আয় করা সম্ভব।


পৃথিবীতে প্রায় ১২০ জাতের কবুতর রয়েছে। বাংলাদেশের ২০ জাতের কবুতর পাওয়া যায়। এদের দুই জাতে ভাগ করা হয়- ‘জালালি কবুতর’ উন্নত জাতের দেশি কবুতর। মাংস উৎপাদনের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু জাত হলো- হোয়াইট কিং, টেক্সেনা, সিলভার কিং, হামকাচ্চা, কাউরা, হোমার, গোলা, ডাউকা, লক্ষ্যা পক্কা ইত্যাদি।

শখের বশে যারা কবুতর পালেন তারা বেছে নেন সিরাজী, ময়ুরপঙ্খী, লাহোরি, ফ্যানটেইল, জেকোভিন, মুখি, গিরিবাজ, টাম্পলার, লোটন প্রভৃতি কবুতর। এছাড়া উড়ন্ত অবস্থায় ডিগবাজি খেয়ে মানুষের নজর কাড়ে গিরিবাজ কবুতর। কবুতর পালন করার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়, ঘর নির্মাণ, খাদ্য ও রোগ ব্যবস্থাপনা করা।

তিনভাবে কবুতর পালন করা যায়

যথা-

  • মুক্ত পদ্ধতিতে পালন- এ পদ্ধতিতে কবুতর পালন করতে হলে প্রথমে কবুতর এর থাকার জন্ন্য একটি ঘর প্রয়োজন যেখানে সকালে কবুতর ছেড়ে দেওয়া হয়। তারা সারাদিন এদিক সেদিক উড়ে বেড়ায় এবং খাদ্য খায়। মাঝেমধ্যে ঘরে আসে। সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে আসে। 
  • আবদ্ধ পদ্ধতিতে পালন- একটি আবদ্ধ ঘরে কবুতর পালন করা হয়। ঘরের ভেতর কবুতরের বাসা বা খোপ তৈরি করে দিতে হয় এবং এখানেই তাদের খাবার দিতে হয়। বহুতল খাঁচায়ও এই পদ্ধতিতে পালন করা যায়।
  • অর্ধআবদ্ধ পদ্ধতিতে পালন- এ পদ্ধতিতে কবুতর পালন করতে হলে বহুতল ঘর তৈরি করতে হবে অথবা বড় আঙিনায় থাকে। কবুতর দূরে যেতে পারে না।ক্ষতিকর প্রাণির থেকে রক্ষার জন্য উঁচু স্থানে ঘর করতে হবে । প্রতি জোড়া (একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী) কবুতরের জন্য এক বর্গফুট করে ঘরের প্রয়োজন হয়। জায়গা কম থাকলে একই জায়গায় কবুতরের ঘর কয়েক তলা করা যেতে পারে। এতে খরচও বাঁচে, জায়গাও বাঁচে। ঘরের সামনে অবশ্যই পযাপ্ত পরিমান যায়গা রাখতে হবে। কবুতরের ঘর এমন জায়গায় করতে হবে যেখানে সহজে আলো বাতাস প্রবেশ করে। বৃষ্টির পানি, ঝড়ো বাতাস ও শৈত্যপ্রবাহ যাতে না ঢুকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘরের সামনে খাদ্য ও পানির পাত্র রাখতে হবে। এছাড়া খড়কুটো এবং শুকনো ঘাসও রাখতে হবে যেন কবুতর ডিম পাড়ায় স্থান তৈরি করতে পারে।

কবুতর পালনে লাভ কেমন

আপনি যদি পশু-পাখি প্রিয় মানুষ হয়ে থাকেন এবং পাখি জাতীয় কিছু পুষতে চান তাহলে আপনি কবুতর পালন করতে পারেন। প্রাচীনকাল থেকেই কবুতর সুস্বাদু মাংস, সংবাদ প্রেরণ ও শখ করে পোষার জন্য কবুতর পালন হয়ে আসছে। বাচ্চা কবুতরে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন থাকে এবং এর মাংস খেতে খুবই সুস্বাদু।একজোড়া উন্নতজাতের কবুতরের দাম ১হাজার থেকে প্রায় ২লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বংস বিস্তার এর জনয কবুতরকে জোড়ায় জোড়ায় রাখা হয়ে থাকে। সাধারণত কবুতর ক্রয়-বিক্রির সময় জোড়ায় কেনা বেচা করতে হয়। একটি কবুতর প্রায় ১২-১৫ বছর জীবিত থাকে। এবং কবুতর প্রতিনিয়ত ডিম দিতে থাকে।দিম দেওার ১৮-২১ দিন এর মধ্যেই বাচ্চা উঠাতে সক্ষম হয়। সাধারণত এর বাচ্চা ৩-৪ সপ্তাহে খাওয়া ও বিক্রয় এর জনয উপযোগী হয়ে যায়।খোপ এ বাচ্ছা থাকা অবস্থায় এর আবার ডিম দেয় এবং আগের বাচ্চাকে খাওয়া দেয়। কবুতর মুক্তভাবে পালন করলে এরা বাইরে খাবার খাই এর ফলে এর খাবার খরচ ও কমে যায় কম খরচে সল্প সময়ে অল্প পুজিতে লাভবান হওয়া যায়। কবুতর এর বাচ্চায় প্রচুর পরিমানে পুষ্টিগুন থাকায় এর চাহিদাও অনেক থাকে তাই এটা বাসা থেকেই কিনে নিয়ে যায়।সবচেয়ে বড় কথা মুক্তভাবে কবুতর পালন করলে এরা নিজেদের খাবার নিজেই ব্যবস্থা করে থাকে। কবুতর অল্প জায়গায় পালন করা যায় যেমন বাড়ির ছাদে,উঠানে,বারান্দায়,জানালার তাক ইত্যাদই জায়গায়। এক জোড়া ভালো কবুতর থেকে বছরে ৮-১০ জোড়া কবুতর পাওয়া সম্ভাব। তাই অল্প সময়ে কবুতর পালনে লাভবান হওয়া যায়।

কোন জাতের কবুতর বেশি বাচ্চা দেয়

বাংলাদেশে এখন অনেক জাতের কবুতর পাওয়া যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ভালো কবুতর এর নাম নিচে দেওয়া হলো 
দেশি কবুতরের জাতঃ
  • গোলা
  • দেশি গিরিবাজ 
  • জালালি কবুতর
উন্নত জাতের কবুতরঃ
  • গোলা কবুতর
  • সিরাজ 
  • ময়ূরপঙ্খী অথবা লাক্কা
  • গিরিবাজ জাতের কবুতর
উপরের উল্লেখিত কবুতর এর জাতগুলোর মধ্যে গিরিবাজ ও জালালি জাতের কবুতর বেশি ডিম ও বাচ্চা দিয়ে থাকে।
গিরিবাজঃ এটি একটি উন্নত জাতের কবুতর। এ জাতের কবুতর এর এনার্জি অনেক বেশি হয়ে থাকে তাই এরা বছরে ১২ মাসে ১২ জোড়া বাচ্চা দিয়ে থাকে। এদের অনেক এনার্জি থাকায় এরা অনেক উড়তে সক্ষম হয়।
জালালি কবুতরঃ এটি একটি দেশি জাতের কবুতর। এরা প্রচুর পরিমানে দিম দিয়ে থাকে। এজাতের কবুতর বাচ্চা ফুটানোর ১৫ দিন এর মাথায় আবার দিম দিতে সক্ষম। তাই এজাতের কবুতর অনেক লাভজনক হয়।

লেখকের শেষ কথা

উপরোক্ত আলোচনায় আমরা চেষ্টা করেছি কোন জাতের কবুতর পালন লাভজনক বেশি ও এটি পালনের সহজতম উপায়। আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনি মনোযোগ দিয়ে পরে থাকেন তাহলে আশা করি কবুতর নিয়ে আপনাকে আর কারো কাছ থেকে জানার প্রয়োজন হবে না। এতক্ষণ ধরে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট আরো পড়তে চাইলে নিয়মিত অনেকের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url