সুন্দরবন বাংলাশের কোন কোন জেলায় অবস্থিত ?

প্রিয় পাঠক পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভবন সুন্দরবন বাংলাশের কোন কোন জেলায় অবস্থিত এটা হয়তো আপনি অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। সুন্দরবন বাংলাশের কোন কোন জেলায় অবস্থিত সেটি নিয়ে আমি আজকে আলোচনা করব। আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পরেন তাহলে সুন্দরবন বাংলাশের কোন কোন জেলায় অবস্থিত তা জানতে পারবেন।
সুন্দরবন এর মানচিত্র
এই আর্টিকেলটির নিচে আমরা চেষ্টা করেছি সুন্দরবন বাংলাদেশের কোন জেলায় অবস্থিত।এছাড়াও সুন্দরবন নিয়ে কিছু পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি যেগুলো আপনার অনেক উপকারে আসবে।

ভূমিকা 

পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভবন সুন্দরবন। এর মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।যার (৬৬%) বাংলাদেশের। এটি বাংলাদেশের মোট আয়তনের  ৪.৩% । ১৭৫৭ সালে সুন্দরবন এলাকার মানচিত্র তৈরি করা হয়। সুন্দরবন বাংলাদেশের ৫টি জেলার অংশ নিয়ে অবস্থিত। ১৯৯২ সালের ২১ মে সুন্দরকে রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সুন্দরবনে ছোট-বড় সব মিলিয়ে ১০২টি দ্বীপ রয়েছে। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বার পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এ বনাঞ্চলটিকে দস্যু মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর সেদিন থেকে এই দিনটিকে দস্যু মুক্ত সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।

সুন্দরবন শব্দের অর্থ কি

সুন্দরবন-এর অর্থ হলো সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি। এ জঙ্গল অধিক পরিমান এ সুন্দরী গাছ পাওয়া যায় তাই সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে। সুন্দরবনের প্রাতিষ্ঠানিক নাম সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্ট। ইউনেস্কো সুন্দরবনকে ১৯৯৯ সালে World Heritage site এর অন্তর্ভুক্ত করেন। সুন্দরবন বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত একটি বিস্তীর্ণ বনভূমি। 
যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বনভূমির মধ্যে একটি। সুন্দরবন হলো পৃথীবির সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন।এখানে প্রায় সুন্দরবনে মোট ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ,প্রায় ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী,প্রায় ৮ টি উভচর প্রাণী, প্রায় ৩৫ সরীসৃপ এবং ১২০ প্রজাতির মাছ রয়েছে।

সুন্দরবনের আয়তন কত হেক্টর?

সুন্দরবন হলো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় ম্যাংগ্রোভ বন যা বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অঞ্চল নিয়ে অবস্থিত। সুন্দরবন এর মোট আয়তন ১,৩৯,৫০০ হেক্টর (৩,৪৫,০০০ একর) বা প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।যার (৬৬%)বাংলাদেশের যা বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ৪.৩% এবং (৩৪%) ভারতের।সুন্দরবনে ছোট-বড় সব মিলিয়ে ১০২টি দ্বীপ রয়েছে।
১৭৫৭ সালে সুন্দরবন এলাকার মানচিত্র তৈরি করা হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কর্তৃক সুন্দরবন এর মানচিত্র করা হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ ছিল। ১৮৭৮ সালে পুরো সুন্দরবন অঞ্চলকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এর ফলে বেসামরিক জেলা প্রশাসনের থেকে বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। পরবতীকালে ১৮৭৯ সালে বন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত করা হয় যার সদর দপ্তর খুলনায় প্রতিষ্ঠিতকরা হয়েছিলো।

সুন্দর বন বিখ্যাত কেন?

সুন্দরবন তার নামের মতই সুন্দর এর প্রাকৃতিক দৃশ্য এতই সুন্দর যে এখানে কেও একবার গেলে তারমন বারবারই সেখানে ফিরে যেতে মন চাই। সুন্দরবন মূলত রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর জন্য বিখ্যাত এছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পাখি, চিত্রা হরিন, কুমির, সাপ ও অসংখ্য প্রানী।১৯৯২ সালের ২১ মে সুন্দরকে রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
সুন্দরবন বাংলাদেশের অহংকার এবং এটি আমাদের জাতীয় সম্পদ গুলোর একটি।বাংলাদেশে প্রতি বছর বহু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে যেগুলো মোকাবেলা করতে সর্বপ্রথম এগিয়ে থাকে সুন্দরবন। সুন্দরবন বিশ্বের বিখ্যাত এবং সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন।বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল নিয়ে সুন্দরবনের বিস্তৃত অঞ্চল গঠিত।
আমরা সুন্দরবন থেকে অনেক জ্বালানি কাঠ,এখানের সুস্বাদু মধু,ও প্রচুর পরিমানে মাছ সংগ্রহ করে থাকি। এছাড়া এখানে প্রচুর পরিমানে গোলপাতা পাওয়া যায়। সুন্দরবনে প্রায় ৯৭০০০ টন গোলপাতা পাওয়া যায়। এখানে প্রায় প্রতিবছর ২২০ টন মধু ও প্রায় ৫০ টন মোম সংগ্রহ হয়ে থাকে।
১৯৯৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ অর্গানাইজেশন আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে সুন্দরবনকে ঘোষণা করেন। এর পর থেকেই বাংলাদেশকে সুন্দরবন এর দেশ হিসেবে সারা বিশ্ব চিনে। সুন্দরবন সাধারণত সুন্দরী গাছের জন্য বিখ্যাত। এ বনে সুন্দরি গাছের পরিমান সব থেকে বেশি তাই এর নাম অনুযায়ী এ বনের নাম রাখা হয় সন্দরবন।
এই রয়েল বেঙ্গল টাইগার শুধুমাত্র বাংলাদেশের সুন্দরবন এই দেখা যায় এবং অন্য কোন দেশে সাধারণত দেখা যায় না।সুন্দর বনে যতগুলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে তা নিয়ে ২০০৪ সালে সর্বশেষ জরীপ করা হয় সে অনুযায়ী এখানে ৪৪০টি বাঘ এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এখানে পুরুষ বাঘের সংখ্যা হল ১২১টি এবং ২৯৮টি মহিলা বাঘ দেখা যায় এছাড়া বাকি ২১টি বাচ্ছা বাঘ রয়েছে।
বাঘ ছাড়াও এখানে রয়েছে চিত্রা হরিণ, গলদাহ হরিণ, বানর, মেছো, বাঘ ,কুমির ,কচ্ছপ ,ডলফিন , শুশুক, বনবিড়াল ,শেয়াল ,গিরগিটি ইত্যাদি। পশু পাখির মধ্যে সুন্দরবনের সব থেকে বেশি হরিণকেই বিচরণ করতে দেখা যায়।এখানে আরও রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ যে মাছ গুলোর নাম আমরা কখনো শুনিনি। নিম্নে কিছু নাম দেওয়া হলোঃ
  • পারশে
  • খড়শোলা
  • কাইক্কা
  • তপসে
  • নোনা টেংরা
  • গুটিদাতি না
সুন্দরবনে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছ।যে গাছ গুলো সুন্দর বনকে আরও রুপময় করে তুলেছে । সুন্দরী, কেউরা,গেওয়া, গরান,প্রভৃতি গাছ,নল খাগড়া,শন, গোলপাতার মত ঘাস জাতীয় গাছ ও প্রচুর জন্মে সুন্দরবনে।এছাড়াও এখানে বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখি রয়েছে। পশু-পাখির তালিকা নিচে দেওয়া হলো
  • পাখি - ২৭০ প্রজাতি
  • স্তন্যপায়ী পশু - ৪২ প্রজাতির
  • সরীসৃপ প্রজাতির পশু - ৩৫ প্রজাতি
  • উভচর প্রাণী - ০৮প্রজাতির
উপরের আলোচনা থেকে আপনি নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন যে সুন্দরবন কেন বিখ্যাত।এখানের গাছ-পালা পশু-পাখি, রয়েল বেঙ্গল টাইগার,ও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর জন্য এই বনটি মানুষের কাছে এত প্রিয় তাই সবার ভ্রমন তালিকায় সবার উপরে থাকে সুন্দরবন।

সুন্দরবন বাংলাদেশের কয়টি জেলা কে স্পর্শ করেছে?

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যাংগ্রোভ বন হচ্ছে বাংলাদেশে অবস্থিত সুন্দরবন। যার অপরূপ একজন ভ্রমন প্রিয় মানুষের মন জয় করে আসছে বছর এর পর বছর ধরে, তাই মানুষ ভ্রমন এর জন্য বারবার এখানে ঘুরতে আসে। সুন্দরবন এর প্রায় ৬,০১৭ বর্গ কি.মি. বাংলাদেশে রয়েছে যা বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ,দীর্ঘতম লবণাক্ত জলাভূমি এবং জীব বৈচিত্র দ্বারা সমৃদ্ধ।
সুন্দরবন বাংলাদেশের ৫টি জেলা নিয়ে অবস্থান করছে। জেলার নাম গুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
  • খুলনা।
  • বাগেরহাট।
  • সাতক্ষীরা।
  • প্টুয়াখালি।
  • বরগুনা।

বাংলাদেশে সুন্দরবনের দস্যুতার অবসান

সুন্দরবন এ প্রতিবছর প্রায় হাজার হাজার পর্যটকদের ভিড় থাকে।এটি একটি বনাঞ্চল হওয়ার কারনে এখানে প্রায় অপহরণ-হত্যাসহ বিভিন্ন চোরাচালান এর কথা শোনা যেত।জেলেদের কষ্টার্জিত উপার্জনের ভাগও দিতে হত তাদের। বন্যপ্রাণী, মাওয়ালি, বাওয়ালি ও বনজীবী ছাড়াও পর্যটক সুন্দরবনে সাভাবিক ভাবে ভ্রমণ করতে পারত না। অর্থনৈতিক গতিশীলতায় ব্যাপক ভাবে বাধা পেত।
কিন্তু বতমানে সুন্দরবন এর চিত্র ভিন্ন হয়েছে। সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করারা মাধ্যমে। যা সম্ভাব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনার পরিকল্পনার মাধ্যমে। সুনদরবন থেকে এখন পযন্ত মোট ৩২টি দস্যু বাহিনী তাদের ৪২৬টি অস্ত্রসহ ৩২৪ জন সদস্য র‍্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। এধারা বজায় রাখতে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বার প্রধান্মন্ত্রির উপস্থিতে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যাত পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এ বনাঞ্চলটিকে দস্যু মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর সেদিন থেকে এই দিনটিকে দস্যু মুক্ত সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।

লেখকের কথা
প্রিয় পাঠক আমার এই আর্টিকেলটির মধ্যে আমি চেষ্টা করেছি সুন্দরবন বাংলাদেশের কোন কোন জেলায় অবস্থিত ও এর আয়তনসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে। আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং কোন উপকারে আসে তাহলে আপনি আপনার প্রিয়জন এর সাথে সেয়ার করুন।
ধন্যবাদ❤

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url