প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কী এটা হয়তো আপনি অনেক খুঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পরলে আপনি জানতে পারবেন প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ ও প্রেগন্যান্সি টেস্ট কীভাবে করে সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
শুধু তাই নয় বন্ধুরা আমার আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পরলে আরও জানতে পারবেন প্রেগনেন্ট হলে কত দিনের মধ্যে বোঝা যায়, মাসিক বন্ধ হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়, মিলনের কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয় ইত্যাদি ছাড়াও আরও অনেক বিষয়ে
ভূমিকা
প্রথম কিছু পাওয়া অনেক মধুর ও সবার আগ্রহ অনেক বেশি থাকে। ঠিক তেমনি প্রথমবার মা হওয়াও অনেক স্পেশাল। গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে না। গর্ভাবস্থায় উল্লেখযোগ্য হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। এগুলো বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি করে। কিছু মহিলা গর্ভাবস্থার অনেকগুলি উপসর্গ অনুভব করেন, অন্যদের মধ্যে মাত্র কয়েকটি হতে পারে।
আরও পরুনঃ গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে পিরিয়ড মিস হওয়া, স্তনের পরিবর্তন, ক্লান্তি, ঘন ঘন প্রস্রাব, এবং বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া। যাইহোক, এই উপসর্গগুলি অন্যান্য কারণের কারণে হতে পারে এগুলো আছে মানে এই নয় যে আপনি গর্ভবতী, তাই আপনি যদি সন্দেহ করেন যে আপনি গর্ভবতী তা বাড়িতে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করুন।
গর্ভাবস্থার পরবর্তী পর্যায়ে আপনার শরীরে বিস্তৃত পরিবর্তন ঘটতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে পিঠে ব্যাথা, মাথাব্যথা, পায়ে ক্র্যাম্প বা ভেরিকোজ ভেইন, চুলকানি বা টিংলিং, কোষ্ঠকাঠিন্য, হেমোরয়েডস বা বদহজম, যোনি প্রদাহ বা যোনি স্রাব, বা মেজাজ পরিবর্তন বা বিষণ্নতা। ইত্যাদি। এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লে প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো কি তা জানতে পারবেন।
মাসিক বন্ধ হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়?
মাসিক মিস হওয়ার প্রথম দিনই আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। সাধারণত মাসিক মিস হওয়ার প্রথম দিনেই আপনি গর্ভবতী কি না তা জানা যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনার প্রস্রাবে হরমোনের পরিমাণ কম থাকতে পারে। এমনটা হলে আপনি গর্ভবতী হলেও টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে। তাই মাসিক মিস হওয়ার প্রথম দিন টেস্ট করার পর ফলাফল নেগেটিভ আসলে আপনি কয়েকদিন পর আবার টেস্ট করতে পারেন।
প্রেগন্যান্ট হওয়ার কত দিন পর বমি হয়?
গর্ভধারণ করার প্রথম লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বমি বমি ভাব এবং এটি সাধারণত ৬ষ্ঠ সপ্তাহের দিকে শুরু হয়। এই সময় থেকে শুরু করে সামনের সপ্তাহগুলোতেও এই বমি বমি ভাব থাকতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১২তম সপ্তাহের পর থেমে যায়। এর কারণে আপনার কিছুই খেতে ইচ্ছে করবে না, বিশেষ করে সকালের দিকে।
যদি দেখেন যে স্বাভাবিক খাবার খেতে পারছেন না, তাহলে অল্প একটু মুড়ি বা টোস্ট বিস্কিটের মত শুকনো খাবার খেতে পারেন। তাছাড়া একবারে বেশি পরিমাণে না খেয়ে, কিছুক্ষণ পর পর অল্প পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। মনে রাখতে হবে, বমি হলেও কিন্তু খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে, না হলে দুর্বল হয়ে পড়বেন।
তবে যদি দেখেন যে বমি একটু বেশিই হচ্ছে এবং পেটে কিছু রাখতেই পারছেন না, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা করুন। গর্ভধারণের শুরুর দিকে ক্ষুধামন্দা, অরুচি, বমি ভাব সাধারণ উপসর্গের মধ্যেই পড়ে। প্রথম ১২ সপ্তাহের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনেরই এই উপসর্গ দেখা দেয়।
আরও পরুনঃ কিডনির পাথর দূর করার ৮টি ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়
এ সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজনযে খাবারের গন্ধে আপনার সমস্যা হয় সেগুলো পরিহার করুন। এ সময় বমি না হলেও একটু দুর্বলতা অনুভব করতেই পারেন। তাই যতটা সম্ভব বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করুন। দুর্বলতার সাথে সাথে আরও অন্য ধরণের কিছু অস্বস্তিও এ সময় হতে পারে, যেমন – বার বার প্রস্রাবের বেগ পাওয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও স্তনে ব্যথা অনুভব করা।
সেই ক্ষেত্রে, খুব ভালো হয় যদি আপনি একজন ভালো প্রসূতি-বিশেষজ্ঞের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে সাক্ষাৎ করে নিন। গর্ভকালীন সময়ে এবং মা হবার পরও বিভিন্ন রকম তথ্য ও উপদেশের জন্য নিবন্ধন করুন ‘আপনজন’ স্বাস্থ্যসেবায় ।
মিলনের কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়
সহবাসের কমপক্ষে ২১ দিন পরে আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। প্রেগন্যান্সি টেস্টে সাধারণত গর্ভবতী নারীদের প্রস্রাবে একটি হরমোনের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। গর্ভবতী নারীদের প্রস্রাবে এই হরমোনের পরিমাণ শুরুর দিকে অল্প পরিমাণে থাকে। তাই গর্ভধারণের একদম শুরুর দিকে অথবা সহবাসের পর পরই এই টেস্ট করলে সাধারণত সেই হরমোনের উপস্থিতি নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। এজন্য সহবাসের পর কমপক্ষে ২১ দিন অথবা পরবর্তী মাসিকের সম্ভাব্য তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
বাড়িতে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কীভাবে করে?
অনেকে জানেনা কিভাবে বাড়িতে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়। বেশিরভাগ পরীক্ষার কিটগুলি আপনার পিরিয়ড হওয়ার এক থেকে দুই সপ্তাহ পরে টেস্ট করা সবচেয়ে ভাল ব্যবহার করা হয়। সর্বদা কঠোরভাবে প্রস্তুতকারকের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন। সাধারণভাবে বলতে গেলে, বেশিরভাগ বাড়িতে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটগুলো একই নিয়মে ব্যবহার করতে হয়। নিচে তা দেওয়া হলোঃ
- আপনি একটি ছোট পাত্রে প্রস্রাব সংগ্রহ করুন এবং প্রস্রাবের মধ্যে টেস্ট স্ট্রিপটি ডুবান। বিকল্পভাবে, কিছু কিট একটি পরীক্ষার স্ট্রিপ অফার করে যা আপনি আপনার প্রস্রাবের স্রোতের নীচে ধরে রাখেন।
- ফলাফলের নির্ভুলতা উন্নত করতে, আপনি যখন প্রথম বিছানা থেকে উঠবেন তখন আপনার প্রস্রাব পরীক্ষা করা ভাল। ভোরের প্রস্রাব ঘনীভূত হয় এবং এতে দিনের অন্যান্য সময়ের তুলনায় উচ্চ মাত্রার এইচসিজি থাকে।
- বেশিরভাগ পরীক্ষার স্ট্রিপগুলি একটি রঙিন লাইন বা বিন্দুর উপস্থিতি দ্বারা hCG এর উপস্থিতি নির্দেশ করে।
- ফলাফল দ্রুত হয়. বেশিরভাগ পরীক্ষার কিট সম্পূর্ণ হতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় নেয়।
- বেশিরভাগ কিট দ্বিতীয় টেস্ট স্ট্রিপের সাথে আসে। এটি আপনাকে পরবর্তী পর্যায়ে আবার পরীক্ষা করার অনুমতি দেয়।
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পিরিয়ড বা মাসিক মিস হওয়া। যাদের নিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে এবং আপনার যদি হঠাৎ করেই মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়য়া হচ্ছে প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে ক্লান্তি, বমি-বমি ভাব বা ঘন ঘন প্রস্রাবের মতো সাধারণ কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সেগুলো নিচে দেওয়া হলো।
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকের কিছুদিন আপনার হরমোনের কিছু পরিবর্তন হবে । প্রথম ৩মাস আপনি যেসব সাধারন লক্ষন অনুভাব করবেন তা হলোঃ
- স্তন নরম হয়ে যাওয়া
- মেজাজে চরম পরিবর্তন হওয়া
- বমি-বমি ভাব বা বমি (প্রভাতকালীন অসুস্থতা)
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
- ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়া
- চরম ক্লান্তি বোধ হওয়া
- মাথাব্যথা করা
- বুকজ্বালা করা
- পায়ে খিল ধরা
- পিঠের নিচের অংশ এবং শ্রোণীতে ব্যথা হওয়া
- নির্দিষ্ট কিছু খাবারের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হওয়া
- নির্দিষ্ট কিছু খাবারের প্রতি নতুন করে অপছন্দ তৈরি হওয়া
- কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া
গর্ভাবস্থায় নিজের যত্ন
গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব নারী জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব এর মধ্য দিয়েই মানব সভ্যতা টিকে থাকে ও এগিয়ে যায়। তাই নিরাপদ গর্ভধারণ এবং সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান জন্মদানের জন্য এ সময় বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। আপনার যদি বমি বমি ভাব দেখা যায় সেক্ষেত্রে আপনি আদা, কেমোমিল, ভিটামিন বি৬ এবং/বা আকুপাংচার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
যদি পায়ে খিল ধরার ধরে তাহলে ম্যাগনেসিয়াম বা ক্যালসিয়াম নিয়ে খেতে পারেন। এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর পরামর্শ অনুসারে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এনেও যদি কাজ না হয়, সেক্ষেত্রে স্বস্তি পেতে গমের তুষ বা অন্যান্য ফাইবার জাতীয় সম্পূরক খাদ্যের ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ নাকের পলিপাস দূর করার প্রাকৃতিক ও ঘোরয়া উপায়
একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবের জন্য সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টি যুক্ত খাবার খাওয়া খুবই প্রয়োজনীয়। এর পাসা-পাশি আপনাকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
গর্ভবতী হলে করণীয় কী
আপনি যদি প্রথমবার গর্ভবতী হয়ে থাকেন তাহলে নিচের বিষয়গুলো মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয়
- শুরু থেকেই একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকুন। প্রতি মাসে একবার চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ভালো। ওজন, পালস, রক্তচাপ দেখা হয়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবে ওজন বাড়ছে কি না, সেটাও জানা যাবে।
- গর্ভবতী হওয়ার প্রথম ৩ মাস বা ১২তম সপ্তাহ পর্যন্ত দৈনিক ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড সেবন করতে হবে। ফলিক এসিড ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়।
- দৈনিক ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন।
- গর্ভাবস্থায় নানান রকম ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে। তাই এসময় কাঁচা বা ভালোভাবে রান্না হয়নি এমন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
- গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে অবশ্যই ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি পান, মদপান করা এড়িয়ে চলা উচিত।
- অল্প অল্প করে বারবার খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- খাওয়ার পরপরই শোবেন না। অন্তত আধঘণ্টা পর শোবেন। বুক জ্বালাপোড়া করলে মাথার নিচে দুটি বালিশ রাখতে পারেন।
- হালকা শরীরচর্চার অভ্যাস বজায় রাখা ভালো।
- মন ভালো রাখতে চেষ্টা করুন। প্রিয়জনকে মনের কথা বলুন। এটা গর্ভবতী নারীর কাছের মানুষের দায়িত্ব, যাতে তাঁর মন ভালো থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা।
- চা-কফি কম খাওয়ার অভ্যাস রাখা ভালো।
গর্ভাবস্থায় যেসব বিষয়ে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে
একেক জন গর্ভবতী মেয়েদের গর্ভাবস্থায় মেয়েদের মাঝে ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে আর এসব উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই আপনাকে নিকটতম স্থাস্থ্যসেবা যাওয়া লাগবে
- মারাত্মক খিল ধরা
- ৩৮ (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে জ্বর
- দুর্গন্ধযুক্ত যোনি স্রাব
- প্রস্রাবে যন্ত্রণা
- যোনিপথে রক্ত বের হওয়া
- মারাত্মক বমি-বমি ভাব
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url